সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা 2023

সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা 2023

সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা 2023 : দেশের জনগনের বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের জনগনের সুযোগ-সুবিধার কথা ভেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ ঘটিকায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার শুভ উদ্বোধন করেছেন। দেশের চার শ্রেণির মানুষ এই সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা 2023 অন্তরভুক্তি হতে পারবেন কারা

১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী নাগরিক যে কেই চাঁদা দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্তার সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। চার শ্রেণির বাংলাদেশি নাগরিক চার ক্যাটাগরিতে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
(১) প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণের জন্য)
(২) প্ৰগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণে জন্য)
(৩) সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য)
(৪) সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকগণের জন্য অংশ প্রদায়ক পেনশন)

(১) সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা 2023 প্রবাস স্কিমে কারা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন

প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণের জন্য): বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করিতে পারিবেন। প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করিতে পারিবেন তবে, পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্ৰায় পেনশন নিম্নোক্ত হারে পেনশন প্রাপ্য হইবেন।

সর্বজনীন পেনশন

(২) প্রগতি স্কিমে কারা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন

প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণে জন্য): বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদান পূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে উহার কর্মচারীগণের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% (শতকরা পঞ্চাশ ভাগ) কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০% (শতকরা পঞ্চাশ ভাগ) প্রতিষ্ঠান প্রদান করিবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ না করিলে, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। পেনসনার নিম্নোক্ত হরে সর্বজনীন পেনশন প্রাপ্য হইবেন।

সর্বজনীন পেনশন

(৩) সুরক্ষা স্কিমে কারা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন

সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য): অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ যেমন- কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি পেশার শ্রমজীবি বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। পেনসনার নিম্নোক্ত হরে সর্বজনীন পেনশন প্রাপ্য হইবেন।

সর্বজনীন পেনশন

(৪) সমতা স্কিমে সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন

সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকগণের জন্য অংশ প্রদায়ক পেনশন): বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিম্নে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ [যাহাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ (ষাট) হাজার টাকা] তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। সমতা স্কিমে কর্তৃপক্ষ বিধি ৯ অর্থাৎ মাসিক ৫০০/- টাকা হারে চাঁদা প্রদান করিবেন। পেনসনার নিম্নোক্ত হরে সর্বজনীন পেনশন প্রাপ্য হইবেন।

সর্বজনীন পেনশন

বিস্তারিত গেজেট দেখতে ক্লিক করুন।

পেনশনার আবেদন ফরম

বিস্তারিক জানতে ভিজিট করুন : https://www.upension.gov.bd

স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন

(১) ১৮ (আঠারো) বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়স হইতে ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক তাহাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করিতে পারিবেন।তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর ঊর্ধ্ব বয়সের নাগরিকগণও স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন এবং সেইক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ হইতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হইবেন সেই বয়স হইতে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হইবেন।

(২) প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণ যাহাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নাই, তাহারা তাহাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করিয়া তাহার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা প্রদান করিতে হইবে। আরও শর্ত থাকে যে, নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা প্রদান করিতে হইবে।

(৩) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিগণ তাহাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, স্কিমে অংশগ্রহণ করিবার পূর্বে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করিতে হইবে।

(৪) কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকগণকে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করিয়া আবেদন করিতে হইবে যাহার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর প্রদান করা হইবে।

(৫) আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ অবহিত করা হইবে।

মাসিক চাঁদা প্রদান (সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা 2023)

(১) যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হইলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত স্কিমের জন্য ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করিতে হইবে।

(২) নিবন্ধনের পর আবেদনকারী বিধি ৪ এর উপ-বিধি (৫) এ উল্লিখিত তারিখের মধ্যে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, Online banking, credit card বা debit card এর মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় OTC (Over the Counter) পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করিবেন।

(৩) প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণ credit card বা debit card এর মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করিবেন।

(৪) নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করিতে ব্যর্থ হইলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাইবে এবং এক মাস অতিবাহিত হইলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১% হারে বিলম্ব ফি জমা প্রদান সাপেক্ষে হিসাবটি সচল রাখা যাইবে।

(৫) কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ (তিন) কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হইলে তাহার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হইবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপ-বিধি (৪) অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হইবে না।

(৬) চাঁদাদাতাগণ মাসের নাম উল্লেখপূর্বক যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা করিতে পারিবেন।

(৭) কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করিলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্যকৃত মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করিতে হইবে।

(৮) সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকিবে।

(৯) চাঁদার টাকা জমা হইলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে তাহাকে অবহিত করা হইবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা প্রদান করা না হইলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ প্রদান করা হইবে।

শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে বিধান

(১) কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হইলে তাহাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করিতে পারিবেন।

(২) কোনো চাঁদাদাতার অসচ্ছলতা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ, প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করিবে।

(৩) মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ব্যতীত কোনো চাঁদাদাতাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণা করা যাইবে না।

(৪) চাঁদাদাতার মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল দায়ের করিতে পারিবেন।

(৫) আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে।

(৬) অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষিত হইবার পর সর্বোচ্চ ১২ (বারো) মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করিলেও চাঁদাদাতার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হইবে না।

বিস্তারিত দেখার জন্য ক্লিক করুন

আরও জানুন : স্কুল ও কলেজ জনবল কাঠামো 2021

Leave a Comment

Scroll to Top
Scroll to Top